ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বিএনপিতে ফখরুল-রিজভী চলছে শীতল যুদ্ধ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ১৫ জানুয়ারি ২০২২  

ফখরুল-রিজভী

ফখরুল-রিজভী

বিএনপির সাফ কথা, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে ভিন্ন কথা, দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তার ভাষ্য, চাইলে যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। এমন কথায় রিজভীও কম যান না। তিনি তারেকের কাছে ফখরুলের বিরুদ্ধে বিচার দিয়ে ভোটে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে জারি করেছেন দলীয় আদেশ। বিশিষ্টজনরা বলছেন, মুখে মুখে যতই ‘সমস্যা নেই’ বলুক না কেন, ফখরুল-রিজভী প্রকৃতপক্ষে কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। তাইতো দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে চলে আসছে শীতল যুদ্ধ। যা এখনো চলমান।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, বিগত কয়েক বছর ধরেই মির্জা ফখরুল ও রিজভীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি রাজনৈতিক পাড়ার আলোচনায়। যত দিন যাচ্ছে, বর্তমানে ততই যেন স্পষ্ট হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ অনৈক্যের কথা। যারই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেখা গেছে, ফখরুলের ‘নিরব উৎসাহে’ ভোটে অংশ নেয়া প্রার্থীরা রিজভীর প্রতিহিংসায় পেয়েছেন দলীয় অব্যাহতি।

এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায় বাংলা নিউজ ব্যাংক। জানা যায়, গত বছর পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে ভোট কারচুপির ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ তুলে আর ভোটে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। তবে কিছুদিন না যেতেই আবার বলেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা যেতেই পারে। আর এটাই তো স্ট্যান্টবাজি। জনগণের আইওয়াশ করাও সহজ হবে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের তৃতীয় ধাপে। দেখা যায়, বিএনপি ভোটে না থেকেও আছে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির ৯৬ নেতা-কর্মী, ২৮ ডিসেম্বরের চতুর্থ ধাপের ভোটে ৯৮ জন আর ৫ জানুয়ারির পঞ্চম ধাপের ভোটে ৮৩ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যারা সবাই-ই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। এই অবস্থা দেখে ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থী হন স্বতন্ত্র পরিচয়ে।

বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে লন্ডনে ‘ফখরুলের ঔদ্ধত্য’ নিয়ে নালিশ পাঠান তারেক রহমানের ‘ডান হাত’ খ্যাত দলীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তারেকও সেখান থেকে বলেন, ফখরুলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে পাল্টা সিদ্ধান্ত নিতে। এরপর আর থেমে থাকেননি রিজভী। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন ও নারায়ণগঞ্জে ভোটের প্রচার চলাকালে বেশ কয়েকটি পদচ্যুতি ও বহিষ্কারের আদেশ জারি করেন। যারই প্রেক্ষিতে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা আহ্বায়কের, পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ এবং পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবী সমিতির পদ কেড়ে নেয়া হয় তৈমূরের। সঙ্গে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এও জানিয়ে দেয়া হয়, নারায়ণগঞ্জে তাদের কোনো প্রার্থী নেই।

এখানেই শেষ নয়, তৈমূরের পাশাপাশি কপালে পোড়ে তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়া আরও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তারাও পান অব্যাহতি বা বহিষ্কার আদেশ।

এ বিষয়ে কথা বলতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে। তার সাবলীল জবাব, এটা তো আর একার সিদ্ধান্ত না। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আমার তো কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই যে আমার কাউকে পছন্দ হলোনা তাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলাম। তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, সেই প্রেক্ষিতে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমি সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত। তাই দলীয় কোন ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে চাইছি না। তারেক সাহেব আছেন, রিজভী আছেন-তারাই সব দেখভাল করবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফখরুল-রিজভীর দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপিতে আজ দুটি কেন্দ্র। একটি গুলশান কার্যালয়, আরেকটি নয়াপল্টন কার্যালয়। আর এটি কেবল কথার কথা নয়, প্রমাণিত সত্য। এ থেকে বোঝা যায়, দলটিতে অনৈক্য চরমে। তাছাড়া জনসমর্থনও শুন্য। তাই বলাই বাহুল্য,
অচিরেই বিএনপি পরিণত হতে যাচ্ছে জাদুঘরের রাজনৈতিক দলে। আর সেখান থেকে তারা চাইলেও আর ফিরতে পারবে না। কোনদিনই না, শুধুমাত্র নিজেদের কর্মদোষেই।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়